কিশোরগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের একটি জেলা। এটি দেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত এবং এর উত্তরে নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলা, দক্ষিণে নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে গাজীপুর ও ময়মনসিংহ জেলা দ্বারা সীমাবদ্ধ। জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মুসলিম, সঙ্গে একটি ছোট হিন্দু সংখ্যালঘু।
কিশোরগঞ্জ একটি প্রধান কৃষিপ্রধান জেলা, এবং প্রধান ফসল হল ধান, পাট, গম এবং আখ। এছাড়াও জেলাটিতে টেক্সটাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং সিরামিক সহ বেশ কয়েকটি শিল্পের আবাসস্থল। কিশোরগঞ্জ একটি প্রাণবন্ত এবং বৈচিত্র্যময় জেলা যেখানে দর্শনার্থীদের জন্য অনেক কিছু রয়েছে।

কিশোরগঞ্জ নামকরণ ও জেলার ইতিহাস
কিশোরগঞ্জ জেলার নামকরণের ইতিহাস দীর্ঘ ও জটিল। জেলার আদি নাম ছিল কিশোরগঞ্জ, এবং ধারণা করা হয় যে নামটি "কিশোর" এবং "গঞ্জ" শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ যথাক্রমে "তরুণ" এবং "বাজার"। এটি এই সত্যের উল্লেখ বলে মনে করা হয় যে জেলাটি একসময় একটি প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল।
১৮৬০ সালে কিশোরগঞ্জকে ময়মনসিংহ জেলার একটি মহকুমায় পরিণত করা হয়। এটি ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ছিল যখন কিশোরগঞ্জ তার নিজস্ব অধিকারে একটি জেলার মর্যাদায় উন্নীত হয়েছিল। তখন জেলার নাম পরিবর্তন করে কিশোরগঞ্জ করা হয়।
কেন জেলার নাম পরিবর্তন করা হয়েছিল তা নিয়ে বিভিন্ন তত্ত্ব রয়েছে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে এটি করা হয়েছিল অবাঙালিদের কাছে নামটি আরও উচ্চারণযোগ্য করার জন্য। অন্যরা বিশ্বাস করেন যে জেলাটিকে তার মুঘল অতীত থেকে দূরে রাখার জন্য এটি করা হয়েছিল।
যে কারণেই হোক না কেন ১৯৮৪ সালে জেলার নাম পরিবর্তন করে কিশোরগঞ্জ করা হয়। তখন থেকেই জেলাটি সেই নামেই রয়ে গেছে।
কিশোরগঞ্জ জেলার উপজেলা/থানা সমূহ
- কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা,
- ভৈরব উপজেলা,
- বাজিতপুর উপজেলা,
- করিমগঞ্জ উপজেলা,
- ইতনা উপজেলা,
- কটিয়াদি (কাটিয়াদ) উপজেলা,
- তাড়াইল উপজেলা,
- হোসেনপুর উপজেলা,
- পাকুন্দিয়া উপজেলা,
- অষ্টগ্রাম উপজেলা,
- মিঠামোইন উপজেলা,
- নিকলি উপজেলা,
- কুলিয়ারচর উপজেলা।
কিশোরগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
শোলাকিয়া ঈদগাহ
জঙ্গলবাড়ি দুর্গ
চন্দ্রাবতী মন্দির
আগরসিংহ দুর্গ
মিঠামইন
নিখিল হাওর
পাগলা মসজিদ
সত্যজিদ রায়ের বাড়ি
কিশোরগঞ্জ জেলার পাবলিক পার্ক সমূহ
উবাই পার্ক
নরোসুন্দা লেক পার্ক
নেহাল গ্রিন পার্ক
কিশোরগঞ্জ সিটি পার্ক
যে কারনে কিশোরগঞ্জ জেলা বিখ্যাত
- ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থান: কিশোরগঞ্জে শাহ মাহমুদ মসজিদ, সাদী মসজিদ, ঈসা খানের দুর্গ এবং ফকির গরীবুল্লাহ শাহের মাজার সহ অনেক ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থান রয়েছে। এই সাইটগুলি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য এবং কিশোরগঞ্জের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি আভাস প্রদান করে।
- প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: কিশোরগঞ্জ মেঘনা নদী, ব্রহ্মপুত্র নদী এবং শোলাকিয়া ঈদগাহ সহ কিছু অত্যাশ্চর্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আবাসস্থল। এই প্রাকৃতিক আকর্ষণগুলি সাঁতার কাটা, বোটিং, মাছ ধরা এবং হাইকিংয়ের মতো বিভিন্ন বিনোদনমূলক সুযোগগুলি অফার করে।
- প্রাণবন্ত সংস্কৃতি: কিশোরগঞ্জও একটি প্রাণবন্ত সংস্কৃতির আবাসস্থল, যা এর সঙ্গীত, নৃত্য এবং উৎসবে প্রতিফলিত হয়। জেলাটি তার লোকসংগীতের জন্য পরিচিত, যেটি প্রায়শই বিয়ে এবং অন্যান্য উদযাপনে পরিবেশিত হয়। কিশোরগঞ্জে কুড়িখাই মেলার আবাসস্থল, একটি বড় বার্ষিক উৎসব যা কটিয়াদী উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয়।