মাদারীপুর মধ্য বাংলাদেশের একটি জেলা, ঢাকা বিভাগে অবস্থিত। এটি উত্তরে ফরিদপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে বরিশাল ও গোপালগঞ্জ জেলা, পূর্বে শরীয়তপুর জেলা এবং পশ্চিমে ফরিদপুর জেলা দ্বারা বেষ্টিত। জেলার মোট আয়তন ১,১৪৫ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ১.৪ মিলিয়নেরও বেশি।
মাদারীপুর প্রধানত মুসলিম অধ্যুষিত একটি জনসংখ্যার বেশিরভাগ গ্রামীণ জেলা। মানুষের প্রধান পেশা কৃষি, মাছ ধরা এবং ছোট ব্যবসা। এই জেলাটি প্রাচীন সোনারগাঁ শহরের ধ্বংসাবশেষ, সুফি সাধক সৈয়দ বদিউদ্দীন আহমেদ জিন্দা শাহ মাদারের সমাধি এবং মাদারীপুর বিল, একটি বৃহৎ জলাভূমি এলাকা যা একটি জনপ্রিয় গন্তব্য সহ বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থানের আবাসস্থল। পাখি দেখার জন্য।
মাদারীপুর একটি উন্নয়নশীল জেলা যার মধ্যে দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা এবং পরিবেশগত অবনতি সহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যাইহোক, এই জেলার বেশ কিছু সম্পদ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অল্পবয়সী জনসংখ্যা, একটি উর্বর জমি এবং একটি কৌশলগত অবস্থান। যথাযথ বিনিয়োগ ও উন্নয়নের মাধ্যমে মাদারীপুর একটি সমৃদ্ধ ও প্রাণবন্ত জেলায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মাদারীপুর নামকরণ ও জেলার ইতিহাস
মাদারীপুর জেলার নামকরণ করা হয় সুফি সাধক সৈয়দ বদিউদ্দিন আহমেদ জিন্দা শাহ মাদার (মৃত্যু ১৪৩৪ খ্রি.) এর নামানুসারে। তিনি ছিলেন একজন পারস্য সুফি সাধক যিনি ভারতীয় উপমহাদেশ ও মধ্য এশিয়া জুড়ে ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি ১৫ শতকের গোড়ার দিকে মাদারীপুরে আসেন এবং সেখানে একটি খানকাহ (সুফি লজ) প্রতিষ্ঠা করেন বলে জানা যায়। খানকাহ একটি জনপ্রিয় তীর্থস্থানে পরিণত হয় এবং মাদারীপুর শহর এর চারপাশে বেড়ে ওঠে।
জেলা ১৮৫৪ সালে বাকেরগঞ্জ জেলার একটি মহকুমা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৩ সালে এটি বাকেরগঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় এবং ফরিদপুর জেলার সাথে সংযুক্ত করা হয়। ১৯৮৪ সালে মাদারীপুর জেলায় উন্নীত হয়।
মাদারীপুর বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত একটি ছোট জেলা। এর উত্তরে ফরিদপুর জেলা, পশ্চিমে গোপালগঞ্জ, দক্ষিণে বরিশাল এবং পূর্বে শরীয়তপুর জেলাগুলি অবস্থিত। পদ্মা নদী জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এবং এর পশ্চিম সীমানা তৈরি করেছে।
মাদারীপুর একটি উর্বর কৃষি জেলা। জেলায় উৎপাদিত প্রধান ফসল ধান, পাট ও শাকসবজি। জেলাটিতে পাটজাত দ্রব্য, বস্ত্র এবং সিরামিক তৈরি সহ বেশ কয়েকটি শিল্পের আবাসস্থলও রয়েছে।
মাদারীপুর একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এই জেলায় শাহ মাদারের মাজার, ঝাউদি গিরি পাহাড় এবং প্রণব মঠ সহ বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থান রয়েছে। মাদারীপুর শকুনি লেক এবং সেনাপতি দীঘি সহ এই জেলাটি অনেকগুলি প্রাকৃতিক আকর্ষণের আবাসস্থল।
মাদারীপুর জেলার উপজেলা/থানা সমূহ
- মাদারীপুর সদর উপজেলা
- শিবচর উপজেলা
- কালকিনি উপজেলা
- রাজোইর উপজেলা।
মাদারীপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
শাহ মাদারের দরগাহ
শোকুনি দীঘি
মিঠাপুর জমিদার বাড়ি
রাজারাম মন্দির
কালীখোলা জমিদার বাড়ি
সেনাপতি দীঘি
আউলিয়াপুর নীলকুঠি
ঝাউদি গিরি
মোস্তফাপুর পার্বতের বাগান
মাদারীপুর জেলার পাবলিক পার্ক সমূহ
মাদারীপুর পৌরশহর শিশু পার্ক
তালতলা
কাজী ফিশ প্রজেক্ট
মিঠাপুর জমিদার বাড়ি
কালীখোলা জমিদার বাড়ি
সেনাপতি দীঘি
যে কারনে মাদারীপুর জেলা বিখ্যাত
- খেজুরের গুড়: মাদারীপুর খেজুরের গুড়ের জন্য বিখ্যাত, যা বাংলায় "পাটালিগুড়" নামে পরিচিত। এই গুড়টি খেজুরের রস থেকে তৈরি করা হয় এবং বিভিন্ন খাবার যেমন মিষ্টান্ন, তরকারি এবং চাটনিতে ব্যবহৃত হয়।
- মিষ্টি: মাদারীপুর তার মিষ্টির জন্যও পরিচিত, যা খেজুরের গুড়, গুড় এবং অন্যান্য উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়। মাদারীপুরের সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু মিষ্টির মধ্যে রয়েছে "মিষ্টি দোই" (মিষ্টি দই), "গুলাব জামুন" (গোলাপের শরবতে দুধের ডাম্পলিং) এবং "রসমালাই" (সিরাপে রসালো দুধের ডাম্পলিং)।
- পাট: মাদারীপুর এক সময় পাট শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল। পাট হল একটি প্রাকৃতিক আঁশ যা ব্যাগ, বস্তা এবং রাগগুলির মতো বিভিন্ন পণ্য তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে মাদারীপুরের পাট শিল্প হ্রাস পায়, তবে জেলাটি এখনও পাটজাত পণ্যের জন্য পরিচিত।
- ঐতিহাসিক স্থান: মাদারীপুরে শাহ মাদারের দরগাহ, বাজিতপুর প্রোনবান্দা মন্দির এবং কাদম্বরী গণেশ পাগল মন্দির সহ অনেক ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে। এই সাইটগুলি জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য এবং মাদারীপুরের ইতিহাস ও সংস্কৃতির একটি আভাস প্রদান করে।
- প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: আড়িয়াল খা নদী, মাদারীপুর লেক এবং ঝাউদি গিরি পাহাড় সহ মাদারীপুর একটি সুন্দর জেলা। এই আকর্ষণগুলি সাঁতার, বোটিং, ফিশিং এবং হাইকিংয়ের সুযোগ দেয়।